এক কালে পালকি ছিল গ্রাম বাংলার সৌন্দর্যের প্রতিক। গ্রাম বাংলার যত লোকজ সামগ্রী আছে পালকি ছিল তার অন্যতম। গ্রামের মানুষ এই পালকীর সাহায্যে বিয়ে শাদী, সুন্নাতে খাতনা,আকিকা সম্পাদন করত এবং নারীরা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত। গ্রামে রিক্সা,ভ্যান,সিএনজি, অটো ইত্যাদি প্রচলন হওয়ার আগ পর্যন্ত মহিলাদের পর্দা রক্ষাকারী যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল পালকি। এছাড়াও বিয়ের অন্যতম বাহন ছিল এই ঐতিহ্যবাহী পালকি।
বরকে পালকি করে কনের বাড়িতে নিয় আসা হত। বিয়ে শেষ করে বর-কণেকে পালকিতে চড়িয়ে বরের বাড়িতে নিয় আসা হত। এখন বিয়ে বাড়ির আগেকার দিনের সামাজিকতা এখনকার বিয়ে বাড়ির সামাজিকতার মধ্যে অনেক পার্থক্য তৈরী হয়েছে। পালকির মত অন্যান্য সামাজিকতা আদর, স্নেহ মমতা,আপ্পায়ন ইত্যাদি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন আর শোনা যায় না গ্রাম বাংলার পথে-ঘাটে বেয়ারাদের মুখে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর সেই বিখ্যাত কবিতা….
“ পালকি চলে! পালকি চলে!
গগন – তলে আগুন জ্বলে।
স্তব্ধ গায়ে আদুল হায়ে
যাচ্ছে কারা রৌদ্র সারা!
ময়রা মুদি চক্ষূ মুদি ,
পাটায় বসে ঢুলছে কষে।
দুধের চাছি শুষছে মাছি
উরছে কতক ভনভনিয়ে।
আসছে কারা হনহনিয়ে?
হাটের শেষে রুক্ষ বেশে
ঠিক দুপুরে ধায় হাটুরে!
কুকুর গুলো শুঁকছে ধুলো
ধুকছে কেহ ক্লান্ত দেহ !
গঙা ফড়িং লাফিয়ে চলে
বাধের দিকে সূর্য ঢলে !
পালকি চলেছে রে!
অঙ্গ টলে রে!
আর দেড়ি কত?
আরো কত দূরে?”
সব কিছুই যেন এখন কালের বির্তনে হারিয়ে গেছে। এটা এখন স্বপ্নের মতো মনে হয় । এখন আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুরের সেই বীর পুরুষ ও মাকে নিয়ে পালীকতে চরে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখে না।
এখন বিয়ে বলতে কয়টি মাইক্রো, হাইচ, বাস, কার ইত্যাদি নিয়ে আসলো সেইটা দেখে। আমাদের আজকের প্রজন্ম পালকি কি কাজে লাগে হয়ত এক সময় বুজবেই না। বাঙালীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হিসেবে পালকীকে টিকিয়ে রাখা দরকার। কিন্ত যদি আমরা বাঙালীরা ভুলে গিয়ে বর্তমান সংস্কৃতির সাথে মিশে যাই,তাহলে বাঙালী ও বাংলার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকি।